একাকিত্ব, অবহেলা ও দারিদ্র্য থেকে জন্ম নেওয়া দর্শনের নাম কার্ট
বিবিধ ডট ইন: একাকিত্ব-অবহেলা ও দারিদ্র্য থেকে যে জীবন দর্শন জন্ম নেয় তারই নাম কার্ট কোবেইন-এর সঙ্গীত। একাধিকবার আত্মহত্যা করতে চাওয়া কোবেইন আত্মহত্যা (মতান্তরে খুন) করতে সফল হন ২৭ বছর বয়সে। তাঁর লেখা ‘সুইসাইড নোট’ও যেন শিল্পের এক ধারালো ছুরি, যে ছুরি জীবনের আঘাত-বেদনা-বাস্তবের ঈশ্বরকে কুচিকুচি করে ছড়িয়ে দিচ্ছে পৃথিবীর সম্মুখে।
____________________________________________
কথায় আছে, কষ্ট বিনা কেষ্ট জোটে না। প্রাসঙ্গিক এই কথায় যদি জুড়ে দেওয়া হয় কোবেইনের জীবনের সাথে তাহলে দ্যাখা যাবে অত্যাধিক একাকিত্ব-অবহেলা-দারিদ্র্য ও ঘৃণার সম্মুখীন হওয়াই কোবেইনের ধারালো জীবন দর্শনের কারণ, যা প্রতিফলিত হয়েছে ওঁর গানে।
মা-বাবার ডিভোর্স, সমকামী নামে বন্ধুদের কাছে বুলিং হওয়া, সৎ মায়ের অসৎ ব্যবহার, আত্মীয়দের আততায়ী, টাকার অভাব, ঠিকানাবিহীন রাত্রি; এসবের প্রতিফলন হিসেবে রগচটা মেজাজ, চিৎকার, উন্মাদনা, ধ্বংসের চরিত— কোবেইনের সঙ্গীত ও তার কথায় ফিরে ফিরে আসে। যতক্ষণ না এক সাধারণ মানুষ এই পরিস্থিতির কাছাকাছি জীবনেকে নিয়ে যেতে পারছে বা রিলেট করতে পারছে ততক্ষণ কোবেইনের সঙ্গীত চিৎকার-চেঁচামেচির থেকে বেশি কিছুই নয়। তাছাড়া ভারতীয় সঙ্গীত যেখানে স্টেজে বসে খুব আদবের সাথে পরিবেশন করার পরম্পরা যুগ-যুগ ধরে বয়ে নিয়ে আসছে, সেখানে ‘উন্মাদ’ কোবেইন বিদেশের স্টেজ প্রস্রাব করে ভাসিয়েছে, ছোটাছুটি করেছে, গিটার ভেঙেছে; তাঁকে মেনে নেওয়া কঠিন হলেও, তাঁকে অবহেলা করা যায় না।
গৌতম বুদ্ধের জীবন অথবা দর্শন নিয়ে একটা সংক্ষিপ্ত লেখায় কতটুকুই বা বলা যায়! ঠিক তেমনই, কার্ট কোবেইনের জীবন ও তাঁর দর্শন নিয়ে হয়তো এভাবে লিখলে পড়া হবে কিন্তু তাঁকে জানা হবে না। তাই যারা কার্ট কোবেইনকে জানতে আগ্রহী তাদের জন্য লিখে দিচ্ছি পাঁচটি বইয়ের নাম; যা পড়লে কার্টের জীবন ও দর্শন আঁচ করা যায়।
যে মানুষ তাঁর সুইসাইড নোটে লিখেছেন— ‘নিভে যাওয়ার চেয়ে পুড়ে শেষ হয়ে যাওয়া ভাল’, তাঁকে অন্তত গভীরভাবে না জানলে আসল জানা জানাই হবে না।
১. Heavier than Heaven— নিউইয়র্ক টাইমস-এর বেস্টসেলার কার্ট কোবেইনের জীবনী। প্রায় ৪০০ ইন্টারভিউ। কার্টের ব্যক্তিগত জার্নাল ও লিরিক্স খতিয়ে লেখা এই জীবনীগ্রন্থে ওঁর মৃত্যু নিয়ে লেখক Charles R. Cross দারুণ সমালোচনা করেছেন।
২. Love & Death— আত্মহত্যা নাকি খুন! কার্ট কোবেইনের মৃত্যু নিয়ে বিতর্কিত তদন্তের প্রতিফলন এই জার্নাল। ডজনখানেক অডিও টেপ খতিয়ে Max Wallace আর Ian Halperin -এর লেখা এক বহু বিতর্কিত একটি বই।
৩. Serving the Servant— ২৫ তম মৃত্যুবার্ষিকীতে HarperCollins’ Ecco থেকে প্রকাশিত বই। কার্ট কোবেইনের স্মরণে Danny Golderg লিখছেন কোবেইনের সাথে কাটানো মুহূর্তগুলোর কথা। এছাড়া Nirvana -র বিখ্যাত ম্যানেজার Danny এই বইয়ের মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন বহু অপ্রকাশিত জার্নাল।
৪.Godspeed— কার্ট কোবেইনের এই জীবনীতে কোবেইনের একাত্মবোধ ও তাঁর জীবনের কঠিন ব্যথা ও তার থেকে লড়ে যাওয়ার উপর লেখকরা বেশি করে জোড় দিয়েছেন। এছাড়া Barnaby Legg আর Jim McCarthy জীবনের সাথে কার্ট কোবেইনের জীবনকে মিলিয়ে দেখবার চেষ্টা করেছেন লেখক Barnaby Legg & Jim McCarthy & Flameboy.
৫. Journals by Kurt Cobain— এই বইয়ের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে কার্টের লেখা অসমাপ্ত চিঠি, লেখার পান্ডুলিপি, শর্ট নোটস্, শপিং লিস্ট, স্কেচ ইত্যাদি।
যারা জানার তারা ঠিক জেনে নেবে বইয়ের মাধ্যমে। দরকার হলে আমি আরও লিখব। একটা সময় পর কোবেইন জীবন ব্যবসায়ীদের জন্য পণ্য হয়ে উঠলেও ব্যক্তিগতভাবে কোবেইন জীবন ব্যতিক্রমী।
কোবেইন প্রতিটি ব্যথায় কাতর মানুষের জন্য রেখে গেছে তাঁর সঙ্গীত ও জীবন। সেখান থেকে সমাজ চেতনা ও রাজনৈতিক মতবাদ ছুরির মতো। এই সমসাময়িক পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে বলতেই হয়— এই সেলিব্রিটিদের যুগে যদি সৎ শিল্পীর কথা; তাহলে অবশ্যই নাম নিতে হয় কার্ট কোবেইন-এর। এছাড়া কার্ট বলেছেন — “I’d rather be hated for who I am, than loved for who I am not.” — কারণ এ-কথা প্রকৃতি শিল্পী না হলে বলা যায় না।
একাকিত্ব, অবহেলা ও দারিদ্র্য থেকে জন্ম নেওয়া দর্শনের নাম কার্ট লিখলেন বিশ্বরূপ হাওলাদার