বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবসে দুই বাংলার যৌথ প্রচেষ্টা— রূপম-রাজুর ‘সব্বাই সবার মতনই’
বিবিধ ডট ইন: কথা বলা, মেলামেশা কিম্বা স্বাভাবিক মানসিক বৃদ্ধির ক্ষেত্রে তৈরি হয় অন্তরায়। সচেতনতার অভাবে এখনও একপ্রকার ব্রাত্য নিউরো-ডেভলপমেন্ট ডিসঅর্ডার আক্রান্ত শিশুরা। এ কি আমাদের দায় নয়? পৃথিবীতে বেড়েই চলেছে অটিজম। ভারতবর্ষে প্রতি ৫৮ জন শিশুর মধ্যে গড়ে ১ জন অটিজম নিয়ে জন্মায়। আলবার্ট আইনস্টাইন, মোজার্ট থেকে শুরু করে বিলগেটসের মতন মানুষও অটিজম-কে টপকে সাফল্যের চুড়োয় পৌঁছতে পেরেছেন। তবে এই রোগ সম্বন্ধে আরও বেশি প্রচার প্রয়োজন বলেই মনে করেন শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ। কারণ ওরাও স্বাভাবিক। ওরাও আমাদের মতোই। আসলে ‘সব্বাই সবার মতনই’। সেই ভাবনা থেকেই রূপম ইসলামের কথা ও সুরে এ আই রাজুর কণ্ঠে শোনা গেল সচেতনতার বার্তা। প্রকাশিত হল অটিজম নিয়ে সচেতনতা প্রচারের গান।
২ এপ্রিল, বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস। আর অটিজম সচেতনতা দিবস-কে উপলক্ষ করে আরও একবার গানে গানে এক হয়ে গেল কাঁটাতারের এপার ওপার। ওপার বাংলার এ.আই রাজু-র কন্ঠে এপার বাংলার রূপম ইসলামের কথায় ও সুরে প্রকাশিত হল ‘সবাই সবার মতনই’র মিউজিক ভিডিও। গানটির মিউজিক অ্যারেঞ্জমেন্ট করেছেন শিবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, গিটার বাজিয়েছেন জন পল, মিক্সিং এন্ড মাস্টারিং করেছেন প্রসেনজিৎ চক্রবর্তী (পম)। তানভীর আলম সজীবের স্টুডিও Jungle-এ রেকর্ড করা হয়েছে এই গান। গানটির দৃশ্যায়নের দায়িত্বে শমীক রায়চৌধুরী।
আমাদের কাছে দৃশ্যমানতাই কি অস্বাভাবিকতার মাপকাঠি? রূপম ইসলাম বলেন,
অটিজমের শিকার ছেলে বা মেয়েটি হয়তো অন্যদের মতো নয়। এটা হয়তো দৃশ্যমান হচ্ছে। কিন্তু এই দৃশ্যমানতার বাইরেও বোধ বলে একটা ব্যাপার থাকে। সেই বোধটাকে কাজে লাগিয়েই সব মানুষই শ্রেষ্ঠত্বের দিকে পৌঁছতে পারবে। অন্যান্য মানুষ যদি তাঁর বা তাঁদের প্রতি সহানুভূতিশীল হন, তাঁদেরও নিজেদের একজন বলে মনে করেন তবেই এটা সম্ভব। বিশ্ব অটিজম দিবসে আমরা এটাই বলতে চেয়েছি যে, সবাই সবার মতনই, সবাই মানুষ। এক্ষেত্রে কোনও পৃথকীকরণ নয়।
গানটির বক্তব্য সম্পর্কে রূপম আরও বলেন,
সব্বাই সবার মতন, কেউ আলাদা নয়। কারও হয়তো বিশেষ ক্ষমতা আছে। কারও হয়তো একটা শক্তি না থাকলে অনেক সময় অন্য আর একটা শক্তি রয়েছে। আমাদের প্রত্যেকেরই কিছু না কিছু নেই। আবার প্রত্যেকেরই অনেক কিছু আছে। আমাদের মধ্যে কারো হয়তো স্মৃতিশক্তি কম, হয়তো কারোর এনার্জি কম, কারও হয়তো ধৈর্য কম, এগুলোর ক্ষেত্রে আমরা অতি সহজে ‘প্রতিবন্ধী’ বা ‘মানসিক অসুস্থ’ এধরনের কিছুই বলি না বা বলতে পারি না। যার ধৈর্য কম তাকে বিভিন্ন মেন্টাল এক্সারসাইজের মাধ্যমে যেতে হয় ব্যাপরাটাকে স্বাভাবিক করতে। এরকম বিভিন্ন পন্থা আছে… যার স্মৃতিশক্তি কম, সে অন্য কোনও দিক থেকে বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন।
সমান সুযোগ বলতে কী বলতে চেয়েছেন রূপম। এই বিষয়ে তিনি সাফ জানিয়েছেন,
সমান সুযোগ মানে কিন্তু সবাইকে চারটে রুটি দেওয়া নয়। সমান সুযোগ মানে যার বেশি খিদে তাকে বেশি রুটি দেওয়া হবে এবং যার কম খিদে তাকে কম দেওয়া হবে। যতটা প্রয়োজন ততটাই দেওয়া, সেটাই হবে সমান।
এই ভাবনাই প্রত্যেক মানুষের মধ্যে আনতে হবে। নইলে ভেদাভেদ তৈরি হবে মানুষের মধ্যে। আমরা এবং ওরা, এই পার্থক্য এলেই সমস্যা। তাই প্রয়োজন হিসেবে প্রত্যেকের পাশে থাকাটাই আমাদের কর্তব্য বলে মনে করছেন রূপম। আর সেই বক্তব্যই প্রতিফলিত হয়েছে গানটিতে।
একই সুর শোনা গেছে মিউজিক ভিডিওটির পরিচালক শমীক রায়চৌধুরীর কথায়। তিনি বলেন,
আমার নিজের ভাগ্নে, ক্লাস সিক্সে পড়ে, এরকম একটা ফেজের মধ্যে রয়েছে৷ তাকে দেখেছি, সে অনেক মেধাবী, পড়াশোনায় ভাল। তার নিজের একটা জগৎ আছে ভাবনাচিন্তার। যেমনটা আমাদের সবারই থাকে৷ কেউ প্রকাশ করি, কেউ প্রকাশ করি না৷ আসলে অবহেলা,অবজ্ঞা, গুরুত্ব না দেওয়ার মতো আচরণগুলো আমাদেরই উলটে দোষী করে তুলছে। আমাদের মনে রাখতে হবে প্রত্যেকটা মানুষ সমান৷ আর সবাই যদি সমান হয়, তাহলে প্রত্যেকের রপ্তি সমান আচরণ করতে হবে।
মিউজিক ভিডিও সম্পর্কে শমীক আরও বলেন,
কাজটা করার কথা ছিল এক বছর আগে। কিন্তু তখনের পরিস্থিতির জন্য করা সম্ভব হয়নি। অবশেষে এবছর যখন এটা হয়েছে, গতবারের উদ্যোগকে দ্বিগুণ করে নিয়ে আমরা এটা করি। রূপমদা হৃদয়স্পর্শী একটা লিরিক লিখেছেন। এতটাই শক্তপোক্ত কথা, যা আমাকেই ভাবতে বাধ্য করে যে, কীভাবে গানটিকে আমি দৃশ্যের মাধ্যমে তুলে ধরব! এখন যেটা তৈরি হয়েছে তাতে মানুষের কাছে অটিজম নিয়ে সচেতনতার বার্তাটা তুলে ধরতে পেরেছি আশা করি এবং এটাই আসল উদ্দেশ্য।
ভারত বাংলাদেশের শিল্পীদের মেলবন্ধনে সামাজিক সচেতনতা নিয়ে একটা গান, এহেন যৌথ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন নেটিজেনদের একাংশ।
এপার বাংলার পরিচালক শমীক রায়চৌধুরি মিউজিক ভিডিওটি পরিচালনা করেছেন, একথা আগেই বলা হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে শমীক এবং তাঁর টিমকে বাংলাদেশেই যেতে হয়েছে। শমীকের অন্যতম প্রধান সঙ্গী হিসেবে চিত্রগ্রহণ এবং সহকারি সম্পাদনার কাজ করেছেন প্রসেনজিৎ কোলে। এছাড়াও চিত্রগ্রহণে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছেন রূপসা দাশগুপ্ত।
এই কাজটির অভিজ্ঞতা সম্পর্কে শমীক বলেন,
এই ভিডিওটা বানাবার জন্য আমরা প্রচন্ড খেটেছি। প্রচলিতভাবে বলতে গেলে, এদের আমরা বুঝতে পারি না। বুঝতে পারলে যে ওরা আর পাঁচজনের মতো তাতে কোনও বিকল্প নেই। মিউজিক ভিডিওটি দেখলে বুঝতে পারবেন, ওরা কত সাবলীল অভিনয় করেছে। এছাড়াও এক্ষেত্রে আমি গায়ক রাজুর কথা বলব। ও নিজে বহুবার বলেছে, ও অভিনয় করতে পারে না। কিন্তু যখন অভিনয় করতে এসেছে আমার মনে হয়েছে ও বেশ স্বতঃস্ফূর্ত অভিনয় করতে পারে। গানের ভিডিওটি দেখলে দর্শকও আশাকরি তা বুঝতে পারবেন।’
লিখেছেন সায়ন্তন মণ্ডল