ফাইজার ও অ্যাস্ট্রাজেনেকা, কোভিড ভ্যাকসিনের হালহকিকত: ড. অনির্বাণ ঘোষ
এখনই শেয়ার করুন
ড. অনির্বাণ ঘোষ। পেশায় চিকিৎসক। বর্তমানে ইংল্যান্ডে এন.এইচ.এস-এ কর্মরত। একসপ্তাহ আগেই তিনি ফাইজারের ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ নিয়েছেন। বিবিধ ডট ইন-এ ব্যক্তিগত সেই অভিজ্ঞতা ছাড়াও ফাইজার ও অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিনের তুল্যমূল্য আলোচনা, ভ্যাকসিন সংক্রান্ত নানা পরামর্শ দিলেন ড. অনির্বাণ ঘোষ। (ফাইজার ও অ্যাস্ট্রাজেনেকা, কোভিড ভ্যাকসিনের হালহকিকত: ড. অনির্বাণ ঘোষ)
গত সপ্তাহে আমি ফাইজার ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজটি পেয়েছি। ১৫ জানুয়ারি পরের ডোজ পাব। জানুয়ারি মাস থেকেই দেশের মানুষও ভ্যাকসিন পাওয়া শুরু করবে। ফাইজারের ভ্যাকসিন পাওয়ার সম্ভাবনা কম। কারণ ফাইজার ইউরোপ, আমেরিকাকে সরবরাহ করে আরও বেশি ভ্যাকসিন বানিয়ে উঠতে পারছে না এত তাড়াতাড়ি। তবে ৩০ ডিসেম্বর ইংল্যান্ডে অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিনকে (অক্সফোর্ড ভ্যাকসিন) অ্যাপ্রুভ করা হয়েছে। এটা একটা বিরাট বড় খবর! কারণ ভারতে সিরাম ইনস্টিটিউট অ্যাস্ট্রাজেনেকার সাথে মিলে ভ্যাকসিন বানাবে! আর অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিনকে সাধারণ ফ্রিজেই স্টোর করা যায়, ফাইজারের ভ্যাকসিনের মতো -৭০° তাপমাত্রায় স্টোর করতে হবে না। আরও সাতটি ভ্যাকসিন ভারতে তৈরি হচ্ছে৷ তাদের অ্যাপ্রুভাল সময়ের অপেক্ষা। এই সাতটি ভ্যাকসিনের ব্যাপারে বিশেষ কিছু আমার জানা নেই। তবে ফাইজার আর অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিনের ব্যাপারে যতটুকু জানি, তা আলোচনা করা যায়।

১। ভ্যাকসিনের ডোজ কটা?
ফাইজার: দু’টো। প্রথম ডোজের ২১ থেকে ২৮ দিন পরে দ্বিতীয়টা নিতে হবে।
অ্যাস্ট্রাজেনেকা: দুটো. প্রথম ডোজের ৪ (চার) থেকে ১২ সপ্তাহ পরে দ্বিতীয়টা নিতে হবে।
দু’টো ভ্যাকসিনই ইন্ট্রামাস্কুলার ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে দেওয়া হবে। টিটেনাস ভ্যাকসিনের মতো।
২। কত বছর বয়সীরা ভ্যাকসিন নিতে পারবেন?
ফাইজার: ১৬ বছর বয়সের উপরে।
অ্যাস্ট্রাজেনেকা: ১৮ বছর বয়সের উপরে।
৩। তাহলে শিশুরা এখন ভ্যাকসিন পাবে না?
আপাতত না। ১২-১৬ বছর বয়সীদের মধ্যে সদ্য ভ্যাকসিন ট্রায়াল শুরু হয়েছে। এর রেজাল্ট আসতে কয়েক মাস সময় তো লাগবেই।
৪। ফাইজার ভ্যাকসিনের এফিকেসি শুনছি ৯৫%। এর মানে কী?
এর মানে ভ্যাকসিন নেওয়ার পরে আপনার শরীর করোনা ভাইরাসে এক্সপোজড হলেও কোভিড হওয়ার সম্ভাবনা ০.০৫ শতাংশ। ট্রায়ালে দেখা গেছে ভ্যাকসিনের পরেও যে সামান্য অংশের কোভিড-১৯ হয়েছে তাদের হসপিটালাইজড হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কম।
৫। অ্যাস্ট্রাজেনেকার এফিকেসি মাত্র ৭০%। তাহলে এই ভ্যাকসিন নিয়ে লাভটা কী?
অ্যাস্ট্রাজেনেকা নভেম্বর মাসে যে ডেটা পাবলিশ করেছিল, তাতে এফিকেসি ছিল ৬২-৯০% এর মধ্যে৷ গড়ে ৭০% এর কাছাকাছি। তবে দু’দিন আগের খবর যে, অ্যাট্রাজেনেকা ‘উইনিং ফর্মুলা’ পেয়ে গেছে। ভ্যাকসিনের ডোজে সামান্য বদল এনে এফিকেসি ৯৫% এর কাছাকাছি চলে এসেছে। এই ডেটা এখনও পাবলিশ হয়নি। তবে খবরটা অ্যাস্ট্রাজেনেকার সিইওর কাছ থেকে পাওয়া গেছে, সুতরাং যথেষ্ট বিশ্বাসযোগ্য।
৬। দু’টো ভ্যাকসিন নিলেই কি কোভিডে ইমিউনড হয়ে যাবেন?
না, ভাল ইমিউনিটি শরীরে তৈরি হতে সময় লাগে। দু’টো ডোজের ২-৪ সপ্তাহের মধ্যে ইমিউনিটি পুরোপুরি তৈরি হবে।
৭। ভ্যাকসিন নেওয়ার পরে স্বাভাবিক জীবন যাপনে কোন অসুবিধা হবে না তো? মদ্যপানের ক্ষেত্রে কোনও বিধিনিষেধ আছে?
না, একেবারে স্বাভাবিকভাবেই সব কাজ করা যাবে। মদ্যপানে ভ্যাকসিনের এফিকেসি কমে যায়, এমন কোনও সায়েন্টিফিক ডেটা নেই। তবে মদ সিগারেট শরীরের ক্ষতিই করে। ওসব ছেড়ে দেওয়াই ভাল।
৮। ভ্যাকসিন নিয়ে অনেকের নাকি মৃত্যু হচ্ছে, এটা কি সত্যি?
সব ভ্যাকসিন থেকেই অ্যালার্জিক রিয়াকশন হতে পারে। এর সবচেয়ে খারাপ মাত্রাকে বলে অ্যানাফাইল্যাক্সিস। এতে কিছু মানুষ মারা যায়। তবে কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিনে অ্যানাফাইল্যাক্সিসের সম্ভাবনা বেশি, এটা ভুল ধারণা।
৯। তাহলে ভ্যাকসিনের সাইড এফেক্ট আছে কিছু?
অন্যান্য ভ্যাকসিনের মতো এরও সামান্য কিছু সাইডএফেক্ট আছে। যেমন:
- ভ্যাকসিন দেওয়ার জায়গায় ব্যথা।
- ক্লান্তি।
- সামান্য জ্বর।
- মাথা ব্যথা।
এই সবই ১-২ দিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যায়। আমার হাতে ব্যথা ছিল। তাই নিয়ে অপারেশন করতে কোন অসুবিধা হয়নি। দু’দিনের মধ্যে ব্যথা একদম ঠিক হয়ে গেছে।
১০। এই ভ্যাকসিন থেকে কি আমার কোভিড হতে পারে?
না, ভ্যাকসিন থেকে কোভিড-১৯ হওয়ার সম্ভাবনা একদমই নেই।
১১। ভ্যাকসিন পাওয়ার পর কি আমি কোভিড-১৯ এর কেরিয়ার হতে পারি?
ভ্যাকসিন পাওয়ার পর আপনার কোভিড হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যাবে। কিন্তু আপনি কোভিড ভাইরাসের কেরিয়ার হয়ে অন্যের মধ্যে তখনও ছড়াতে পারেন। তাই ভ্যাকসিন পাওয়ার পরেও যেগুলো করে যেতেই হবে:
- মাস্ক পরা।
- সোশ্যাল ডিস্টেন্সিং যতটা সম্ভব মেনে চলা।
- হাত ধোয়া।
১২। শুনলাম কোভিডের নতুন দুটো স্ট্রেইন এসেছে, এগুলোকে কি এই ভ্যাকসিন কভার করবে?
এর সঠিক উত্তর এখনই দেওয়া সম্ভব নয়। তবে ভাইরাসের মিউটেড করাটা খুব স্বাভাবিক একটা ঘটনা। কোভিড-১৯ ও বহুবার মিউটেড করেছে। এই নতুন দুটো স্ট্রেইন আগের থেকে দ্রুত ছড়াচ্ছে,কিন্তু এদের মারণক্ষমতা আগের স্ট্রেইনগুলোর থেকে বেশি নয়।
ফাইজার ও অ্যাস্ট্রাজেনেকা, কোভিড ভ্যাকসিনের হালহকিকত: ড. অনির্বাণ ঘোষ

ড. অনির্বাণ ঘোষ
তথ্যসূত্র:
এখনই শেয়ার করুন