এই কারণে রাণী রাসমণির প্রশংসা করেছিলেন লর্ড বেন্টিঙ্ক
বিবিধ ডট ইন: গঙ্গা নদীর তীরে গড়ে ওঠা কলকাতা শহর ও শহরতলির মানুষ এক টুকরো শান্তির খোঁজে আজও গঙ্গা ঘাটের নিরিবিলিকে বেছে নেয়। ঘাটের সিঁড়িতে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত চাক্ষুষ করতে করতে কত সম্পর্ক ভাঙে-গড়ে, কত প্রেমিক যুগলের পদস্পর্শ রয়েছে এইসব গঙ্গা ঘাটের সিঁড়িগুলোয়!
বহু কাল আগে থেকে বিভিন্ন দেশের ব্যবসায়ীরা বাণিজ্যের তাগিদে এই শহরের বিভিন্ন ঘাটে অবতরণ করেছে ও এই শহরে প্রবেশ করেছে এবং বাণিজ্য বিস্তারের সাথে সাথে হিন্দু ধর্মের আচার অনুষ্ঠান ও দেশ দেশান্তরে বহন করে নিয়ে গেছে। বিভিন্ন বাণিজ্যিক লেনদেনের পাশাপাশি গরিব মানুষদের নিয়ে যাওয়া হয়েছে বিদেশে কৃষিকাজ ও কলকারখানায় জন্য এইসব গঙ্গা ঘাটের দ্বারাই | এরকমই একটা ঘাট হল বাবু রাজচন্দ্র দাস ঘাট।
কে ছিলেন এই রাজচন্দ্র দাস, যাঁর নামে এই একটা আস্ত ঘাটের নামকরণ? তিনি ছিলেন এক হিন্দু ধার্মিক ও উদার মনের মানুষ | তাঁর আসল পরিচয় হল, তিনি ছিলেন জানবাজারের জমিদার ও রানী রাসমণির স্বামী। বাবু রাজচন্দ্রের মৃত্যুর পরবর্তীতে তাঁর স্ত্রী রাণী রাসমণি এই ঘাট প্রতিষ্ঠা করেন এবং স্বামীর নামে ঘাটের নামকরণ করেন বাবু রাজচন্দ্র দাস ঘাট, যা বর্তমানে ‘বাবুঘাট’ নামে পরিচিত। তৎকালীন এই আইন ধর্মপ্রাণ হিন্দুদের দ্বারা প্রশংসিত হয়, কারণ এই ঘাটে তাঁরা শুধু ডুবস্নানের জন্যই আসতেন না, এছাড়াও বিভিন্ন ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান পালন করতেন। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন গঙ্গাঘাটের যে তৎকালীন অভাব ছিল, তা এই বাবুঘাটের দ্বারা পূরণ হয়েছিল বলেই মনে করা হয়।
এই ঘাটের যে ফলক আছে এবং তার ওপর যে শিলালিপি অক্ষরিত আছে, তা অন্য একটি কারণে বিশেষ গুরুত্ব বহনকারী বলেই মনে করেন অধিকাংশ মানুষ। কারণ এর মধ্যে ব্রিটিশ সরকার শাসিত ভারতের গভর্নর জেনারেল লর্ড বেন্টিঙ্কের প্রশংসা করা হয়েছে, তাঁর এই ঘাট নির্মাণে সমর্থনের জন্য।
১৮৩০ সালে এই ঘাট নির্মিত হয়। ঘাটের ফলকের নীচে যে স্তম্ভ দ্বারা ফলকটি দণ্ডায়মান আছে সেটি গ্রীক-রোমান স্থাপত্যশৈলি থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তৈরি। রাণী রাসমণি এই ঘাটকে সবচেয়ে জনপ্রিয় ঘাট হিসেবে নির্মাণের ক্ষেত্রে কোনওরকম গাফিলতি করেননি।
লর্ড বেন্টিঙ্ক জনসাধারণের সুবিধার্থে এই ঘাট নির্মাণের জন্য যথেষ্ট প্রশংসিত হয়েছেন, যার ইতিহাস ঘাটের ফলকটি আজও বহন করে চলেছে। তৎকালীন পরিস্থিতিতে একজন ব্রিটিশ প্রতিনিধি এহেন আচরণ সত্যিই বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করার মতো।
পরিচ্ছন্নতার কথা মাথায় রেখে এই ঘাটে একটা জলের কল লাগানো হয়েছিল, যেটার মাধ্যমে গঙ্গাজল আসত এবং ঘাটের আশপাশ ভালভাবে পরিষ্কার করা সম্ভব হতো। ১৮৭৪ সালে কর্নেল উডের আঁকা মানচিত্রে এই ঘাটকেই পূর্ব কলকাতার দক্ষিণ সীমান্ত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
ঘাটের প্রবেশদ্বারে উপরিভাগে ফলকটি আজও পরিলক্ষিত হয়, যা একজন স্বাধীন ও উদারমনস্ক নারীর ইতিহাস বহন করে। মানুষের জন্য যাঁর অবদান অনস্বীকার্য।
লিখলেন সায়নী বন্দ্যোপাধ্যায়।